
ইসলামে কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতি রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। আর্থিক লেনদেনে সততা, স্বচ্ছতা, অঙ্গীকার পূরণ করা, জাকাত দেওয়া এবং ভালো গ্রাহকসেবা প্রদান করা সেই সুনির্দিষ্ট নীতি গুলোর অন্যতম।
একই সাথে ইসলাম ব্যবসায় ধোঁকা, প্রতারণা, মজুতদারি,ফটকাবাজি, সুদ, জুয়া, গোষ্ঠীবিশেষের বাজার নিয়ন্ত্রণ, একচেটিয়া কারবার, পণ্যের দোষত্রুটি গোপন করা, মিথ্যা শপথ করা খাদ্যে ভেজাল মেশানো, মাপে কম দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদি নেতিবাচক কাজকেও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।
👉 ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব নীতি অনুসরণের নির্দেশ দেয়ঃ
⏺ ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য উত্তম কাজ হলেও এর মধ্যে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি যা কঠোরভাবে নিষিষিদ্ধ। পণ্যদ্রব্যে ভেজাল, ভালো পণ্যের সঙ্গে খারাপ পণ্য মেশানো, পণ্যের দোষত্রুটি গোপন করা ইত্যাদি যাবতীয় ধরনের প্রতারণা ইসলামে হারাম। নবী করিম (সা.) কেনাবেচার ক্ষেত্রে পণ্যের বিবরণ, মূল্য, মূল্য পরিশোধের সময় সুস্পষ্ট করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা না দেয় এবং ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি না হয়। আল্লাহ খিয়ানতকারীদের পছন্দ করেন না।
⏺ ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা কোরো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি কোরো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, একে অন্যের পেছনে শত্রুতা কোরো না, একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা কোরো না। তোমরা এক মুসলিম ওপর মুসলিমের ভাই হয়ে যাও ।
⏺ ব্যবসা-বাণিজ্য একটি মহৎ পেশা। সততা ও ন্যায়পরায়ণতার মাধ্যমে ব্যবসা করা উচিৎ, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে। ইসলামে ওজনে কম দেওয়াকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, যা অনেক বেশি নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হবে । আল্লাহ বলেন, “যখন মেপে দেবে পূর্ণ মাপে দেবে এবং ওজন করবে সমান-সঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম এবং পরিণামের দিক থেকে কল্যাণকর “
⏺ ইসলাম মজুদদারি, খাদ্যদ্রব্য বাজার থেকে তুলে নিয়ে দাম বাড়ানো এবং অধিক মুনাফার প্রত্যাশা করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, কারন মজুদদারি, পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সাধারন মানুষকে দুর্ভোগ ও অশান্তিতে পতিত করে । এতে গ্রাহকের সমস্যা তৈরি হয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ক্রেতা জুলুমের শিকার হয়। এ ধরনের কাজ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দেয়, যা হারাম । রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যবসায়ী পণ্য আবদ্ধ ও স্তূপ করে সে গুনাহগার”
⏺ ইসলামের দৃষ্টিতে পণ্যের দোষত্রুটি গোপন রাখা, খাদ্যদ্রব্য, পণ্যসামগ্রী ও পানীয়তে ভেজাল মেশানো একটি মারাত্মক অপরাধ। কেননা খাদ্য ও পানীয় ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। যারা এসবে বিষ দেয় ও ভেজাল মেশায় তাদের ভাবা উচিত, দুনিয়ায় মানুষকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও মহান আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। আল-কোরআনে বলা হয়েছে, “মানুষকে তাদের জিনিসপত্র কম দিয়ো না”, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কোনো ব্যবসায়ীর জন্য উচিত নয় কোনো জিনিস বিক্রি করা এবং তার ভেতরের দোষত্রুটির কথা বর্ণনা না করা”
⏺ সুদকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহ আরো বলেন,”আল্লাহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ করেছেন, আর সুদকে করেছেন নিষিদ্ধ”
ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদ বা মূলধন বৃদ্ধি পায়, কিন্তু এই বৃদ্ধি ইসলামে উৎসাহিত করা হলেও সুদের ভিত্তিতে মূলধনের বৃদ্ধি ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম, আল-কোরআনে বলা হয়েছে ,”আর মানুষের ধন-সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার উদ্দেশে তোমরা যে সুদ নিয়ে থাকো, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি করে না, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো তা-ই বৃদ্ধি পায় এবং তারাই সমৃদ্ধিশালী”
আমরা নিজে যা চাইবে, অন্যের জন্যও তেমন কামনা করবো। ব্যবসা সব সময় হালাল, আমাদের উচিত সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ও ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে হালাল জীবিকা নির্বাহ করা। অথচ আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের বড় অংশই হালাল ব্যবসা ছেড়ে হারাম ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছেন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসার নামে ভোক্তাদের ঠকিয়ে-ঠেকিয়ে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন ।
আগে সৎ হতে হবে নিজেকে। আসুনআমরা আত্মসমীক্ষা ও আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে চিন্তায়-কর্মে, ভেতর থেকে বদলে যাওয়ার সুকঠিন সংকল্পবদ্ধ হই এবং ব্যবসার আড়ালে চলা হারাম ব্যবসার লাগাম টেনে, ভোক্তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করি ।
সব ব্যবসায়ী, সব মানুষ যদি লোভ, অতি মুনাফাকে ঘৃণা করেন তবে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটবে না। কেউ অশান্তি হা-হুতাশে থাকবে না। প্রতারণা, ভেজালের দৌরাত্ম্য নিমিষেই কমে আসবে। আগে সৎ হতে হবে নিজেকে। তার দেখাদেখি অন্যরাও বদলে যাবে, বদলে যাবে ব্যবসার নামে দস্যুবৃত্তি। স্বস্তি খুঁজে পাবেন সবাই। মাহে রমজানে আসুন, আমরা আত্মসমীক্ষা ও আত্মজিজ্ঞাসার মাধ্যমে চিন্তায়-কর্মে ভেতর থেকে বদলে যাওয়ার সুকঠিন সংকল্পবদ্ধ হই এবং ব্যবসার আড়ালে চলা হারাম ব্যবসার লাগাম টেনে, ভোক্তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করি।